ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় ভর্তিতে জালিয়াত চক্র

ইসলামী-বিশ্ববিদ্যালয়

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আসন্ন ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে জালিয়াত চক্র। অবৈধ ভাবে শিক্ষার্থী ভর্তিতে বেপরোয়া চক্রটি বিশ্ববিদ্যালয় ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় গড়ে তুলেছে সক্রিয় জালিয়াত সিন্ডিকেট। প্রতি বছর ভর্তি পরীক্ষার সময় অবৈধ ভাবে ভর্তি করতে মোবাইল মেসেজ, হেডফোন ডিভাইস সহ নানা প্রযুক্তি ব্যবহারের কৌশল নিলেও জালিয়াত চক্রটি এবার আগেভাগেই ভিন্ন রকম কার্যক্রম শুরু করেছে বলে গুঞ্জন উঠেছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যথাযথ তদারকি ও পর্যবেক্ষন চালাবেন বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গৃহিত পদক্ষেপ কতটুকু কার্যকর হবে তা নিয়ে রীতিমত সন্দিহান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা।

সূত্র মতে, আগামী ২৩ নভেম্বর থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক সম্মান শ্রেনীর প্রথমবর্ষ ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে। চলবে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত। প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষার সময় অবৈধ ভাবে ভর্তি করানো, পরীক্ষার হলে নকল সরবরাহ, অসদুপায় অবলম্বনে সহায়তা সহ নানা ধরনের অপকর্মে জড়িত থাকে জালিয়াত চক্রটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষক-কর্মকর্তা, কর্মচারী এই জালিয়াত সিন্ডিকেটের সাথে সম্পৃক্ত বলে গুঞ্জন উঠেছে। বেপরোয়া জালিয়াত চক্রটি ভর্তি পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই তাদের নিকট আত্মীয় ও পরিচিত ভর্তিচ্ছুদেরকে যেকোন উপায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির নিশ্চয়তা দিচ্ছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। সূত্রটি জানায়, কতিপয় কর্মকর্তা ভর্তি আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ করে ভর্তি করানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা।

এছাড়া ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে নিজের প্রার্থীকে পরীক্ষার হলে সহায়তা ও অসাদুপায় অবলম্বনে সহযোগীতার জন্য চক্রটি নানা ফন্দি-ফিকিরের সহযোগিতা নিচ্ছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে নিজেদের প্রার্থীর পরীক্ষার আসন নং, রুম নং অনুযায়ী চক্রটি কৌশলে পরীক্ষার হলে তাদের ডিউটি ওই সব রুমে নিচ্ছে বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে। এক্ষেত্রে নিজেদের পছন্দের রুমে ডিউটি নেয়ার জন্য ডিউটি বরাদ্দের কাজে নিয়োজিত শিক্ষকদেরকে তারা নানা ভাবে প্ররোচিত করছে বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কতিপয় কর্মকর্তা জানান- অবৈধ ভাবে ভর্তি করার জন্য সরকার সমর্থিত কর্মকর্তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অনেকে অফিস টাইমে প্রশাসন ভবনের পিছনে, মেইন গেট সংলগ্ন চায়ের দোকান সহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন নির্জন এলাকায় ভর্তিচ্ছুদের টার্গেট করে তাদের সাথে যোগাযোগ করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। যেকোন উপায়ে ভর্তি করানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে চক্রটি তাদের এসব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

জানা যায়, প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষার সময় এই সক্রিয় জালিয়াত চক্র তাদের প্রার্থীদের ভর্তি করতে নানা অপকৌশল ব্যবহার করে আসছে। নিজের প্রার্থীর আসন নং, রুম নং অনুযায়ী পরীক্ষার হলে ডিউটি নেয়া, মোবাইল মেসেজ, হেডফোন ডিভাইস, প্রশ্নফাঁসের চেষ্টা, উত্তরপত্র সরবরাহ এমনকি ভর্তিচ্ছুকে কর্মকর্তা,কর্মচারীদের ভুয়া স্ত্রী সাজিয়ে ভর্তি সহ নানা অপকৌশলের সুযোগ নেয় চক্রটি। এবছরের ভর্তি পরীক্ষাকে সামনে রেখে চক্রটি জালিয়াতির জন্য একই রকম প্রস্তুতি নিয়েছে বলে কয়েকটি বিশ্বস্ত সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এদিকে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া কেন্দ্রীক জালিয়াত চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন-‘ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়ার বিভিন্ন মেসে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া রাজনৈতিক ছত্রছায়ার অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি জালিয়াতির জন্য জোর প্রস্তুতি নিয়েছে।’ এছাড়া ভর্তি পরীক্ষাকে সামনে রেখে ক্যাম্পাসে বেড়ে গেছে বহিরাগতদের দৌরাত্ম। রাতভর বহিরাগতদের আনাগোনায় ক্যাম্পাসের সাভাবিক পরিবেশের ব্যাহত হচ্ছে বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে।

এদিকে ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে ভ্রাম্যমান আদালত থাকলেও পরীক্ষায় নকল ও জালিয়াতিতে সম্পৃক্তদের শাস্তি প্রয়োগ ও প্রদানে উদাসীনতা ও শিক্ষক-কর্মকর্তাদের লেজুড়বৃত্তি রয়েছে বলে বরাবরই একটি অভিযোগ রয়েছে। ফলে এবছর পরীক্ষা চলাকালে ভ্রাম্যমান আদালত বা আইন শৃংখলা বাহিনী কি ভুমিকা পালন করে তা এখন দেখার বিষয়। তবে ভর্তি পরীক্ষার সময় আইন শৃংখলা পরিস্থিতি জোরদার সহ জালিয়াতি চক্র ও তাদের কর্মকান্ড প্রতিরোধ করার ব্যাপারে দৃড় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রক্টর ড. ত ম লোকমান হাকিম।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকার বলেন-‘এবিষয়টি আগেই আমরা আমলে এনেছি। যেন প্রশ্নপত্র ফাঁস না হয়, এজন্য আমরা একাধিক সেট প্রশ্ন পত্র তৈরীর নির্দেশ দিয়েছি। পরীক্ষার হলে ডিউটি নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন-‘ পরীক্ষার হলে কাউকে তার চাহিদামত রুমে ডিউটি বরাদ্দ না দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হবে।